গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় হলো : আদা । কারন আদা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্দ খাবার । যা পেট ফাপা ও পেটের গ্যাস দূর করতে সহায্য করে থাকে। এছাড়াও আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খেলে দ্রুত গ্যাস ভালো হয়ে যায় ।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য আপনি আরো বিভিন্ন খাবার খেতে পারেন যেমন: শসা , দই, পেঁপে, কলা ও কমলা, লবঙ্গ , অ্যালোভেরা , পুদিনা পাতার পানি , রসুন , ডাবের পানি ।
গ্যাস্ট্রাইটিস বা গ্যাসের সমস্যা হল: এমন একটি অবস্থা যেখানে পাকস্থলীর ঝিল্লির স্তর বিঘ্নিত হয় এবং অ্যাসিড নিঃসরণ হয়। আর এই অ্যাসিডগুলি পাকস্থলীর দেয়ালের সংস্পর্শে আসলে আমাদের পেটে ব্যথা হয় এবং অস্বস্তিকর লাগে যাকে আমরা গ্যাস্ট্রিক বলে থাকি ।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা গ্যাস্ট্রাইটিস হল পেটের আস্তরণের প্রদাহ, জ্বালা বা ক্ষয় যা তীব্র থেকে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে দীর্ঘস্থায়ী অবস্থায় পরিণত হয় আর এক সময় বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয় ।
পেপটিক আলসার: পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রের অগ্রভাগে ক্ষত পাওয়া গেলে তাকে পেপটিক আলসার বলে । আবার কোনো ক্ষত বা আলসার না থেকে শুধু মাত্র গ্যাস্ট্রাইটিস (প্রদাহ) থাকতে পারে। হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের একটি সংক্রমণ আছে যা থেকে প্রদাহ বা ক্ষত দেখা যায় ।
আরো পড়ুন: সাস্থ্যকর বিষয়ের উপর কিছু গুরত্বপূরর্ণ টপিকস:
আবার অনেক রোগীর কোনো ক্ষত বা প্রদাহ নেই। তাঁদের যা হয়, তা হলো নন–আলসার ডিসপেপসিয়া। মানে হজমের রস ওপরে উঠে এসে অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ কি?
আমরা অনেকেই প্রশ্ন করি গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ কি বা কিভাবে আমরা বুজবো আমাদের গ্যাস্ট্রিক হয়েছে ? চলুন আজকে এই সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করি :
গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ গুলো হলো:
- গ্যাস্ট্রিক এর কারনে বমি ভাব বা পেট খারাপ হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে
- পেট ফোলা
- পেটে ব্যথা
- বমি
- বদহজম
- পেট ব্যথা
- আলসার
- পেটে জ্বালাপোড়া
- হেঁচকি
- ক্ষুধামান্দ্য
- বমি রক্ত বা কফি মাটির মত উপাদান
- কালো, টারি মল
গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়
গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা । এছাড়াও তেলে ভাজা খাবার পরিহার করা ।
প্রচুর পানি পান করুন:
- আপনি যখন খাবার খাবেন তখন খাদ্যতালিকায় লেবুর রস অন্তর্ভুক্ত করুন ।
- হালকা কুসুম গরম পানি খেতে পারেন এতে করে কিছুটা আরাম পাবেন ।
শসা:
শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে অনেক বেশি কার্যকর। কারণ শসাতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের বিস্তার কমাতে সাহায্য করে থাকে তাই আপনি শসা খেতে পারেন।
দই:
হজম শক্তি বাড়াতে দই আমাদের সহায়তা করে থাকে । দই খেলে দ্রুত খাবার হজম হয় এছাড়াও পেটে গ্যাস হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
পেঁপে:
পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামের এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে । তাই আপনি যদি নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে আপনার গ্যাসের সমস্যা কমে যাবে ।
কলা ও কমলা: গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
- কলা ও কমলা পাকস্থলির অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সাহায্য করে থাকে ।
- এছাড়াও কলার বিশেষ গুণ হলো: কলার দ্রবীভূত হতে সক্ষম কারণ কলাতে রয়েছে ফাইবার
- আর এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে।
- সারাদিনে অন্তত দুটি কলা পেট পরিষ্কার রাখতে খেতে পারেন ।
লবঙ্গ:
- লবঙ্গে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান যা আপনার শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই গ্যাসের প্রকোপ কমতে সাহয্য করে থাকে ।
- তাই খাওয়ার পর বুক জ্বালা ও ঢেঁকুর উঠলে দু-একটি লবঙ্গ খেতে পারেন এতে করে গ্যাসের সমস্যার সমাধান পাবেন !
অ্যালোভেরা: গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
- অ্যালোভেরায় উপস্থিত নানাবিধ খনিজ ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে যেমন সাহয্য করে থাকে , তেমনি হজম ক্ষমতার বাড়াতে সহায্য করে ।
- শুধু তাই নয়, অ্যালোভেরার উপাদান পেটে তৈরি হওয়া অ্যাসিডের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় যার ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ।
- আর গ্যাসট্রিক এর উপক্রম কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে ।
পুদিনা পাতার পানি:
এক কাপ পানিতে ৫টি পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খান তাহলে আপনার পেট ফাঁপা, বমিভাব দূরে রাখতে সাহায্য করবে ।
রসুন:
- অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে রসুনের কোনো বিকল্প হয় কারণ এক কোয়া রসুন খেয়ে ফেললেই স্টমাকে অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
- যার ফলে আপনার গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন উপসর্গ ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করবে ।
ডাবের পানি:
- হজম ক্ষমতা বাড়তে এবং সব খাবার সহজেই হজম করতে ডাবের পানি খেতে পারেন ।
- এছাড়া নিয়মিত ডাবের পানি খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
- প্রতিদিন ডাবের পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
- এছাড়া ওজন কমানো
- খাবার গ্রহণের সময়ের সঠিক ব্যবধান রাখা
- খালি পেটে চা না খাওয়া
- উপরের সকল বিষয়গুলো নিজের আয়ত্বে রাখতে পারলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা
বুকের মাঝে বা ওপর পেটে ব্যথার সঙ্গে বুক জ্বালাপোড়া করা, টক ঢেকুর বা পেটে গ্যাস ইত্যাদি গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণই নির্দেশ করে।
সাধারণ এই ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হলে অভিজ্ঞ ডক্টরের পরামর্শে অ্যান্টাসিড বা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে এটি ভালো হয়ে যায় ।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য ওষুধ
প্রথমে আমরা জেনে নেই গ্যাস্ট্রিক এর উপসর্গ গুলো কি কি ?
- বুকজ্বলা
- অতিরিক্ত ঢেকুর ওঠা
- পেটব্যথা
- পেটজ্বলা
- পেটফাঁপা
- পেটে অতিরিক্ত গ্যাস
- বদহজম,
- কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি ।
- সময়মতো না খাওয়া,
- বাইরের খাবার খাওয়া
- অতিরিক্ত তেল–মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া
- অতিরিক্ত খাবার খাওয়া
- ধূমপান
- মদপান
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার আর একটি কারণ হলো কম ঘুমানোর অভ্যাসের।
গ্যাসট্রিক এর ঔষধ এর জন্য আপনি অভিজ্ঞ ডক্টরের পরামর্শ নিতে পারেন এতেই আপনার জন্য সব থেকে বেশি ভালো হবে । আর আপনি ঔষুধ ছাড়াই কিছু নিয়ম অনুসরণ করলেই এই গ্যাস থেকে মুক্তি পেতে পারবেন । যেমন:
- সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া,
- বাইরেরখাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা
- অতিরিক্ত তেল–মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা
- বাসি খাবার না খাওয়া
- পরিমিত পরিমাণে খাওয়া
- ধূমপান ও মদপান না করা
গ্যাস্ট্রিকের সঠিক চিকিৎসা না করে অনেকে মাসের পর মাস এন্টাসিড সিরাপ, ওমিপ্রাজল গোত্রের ওষুধ, ডমপেরিডোন গোত্রের ওষুধ সেবন করেন। গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধানে এসব ওষুধের বেশির ভাগেরই কোনো প্রয়োজন নেই।
দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় ।
- এতে টাইফয়েডের মতো কিছু সংক্রমণ হতে পারে
- আপনার ধীরে ধীরে রক্তশূন্যতা ও হাড়ক্ষয়ের রোগ দেখা দিতে পরে
- যাদের কিডনি রোগী আছে তাদের জন্য অ্যান্টাসিড–জাতীয় ওষুধে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে তাই অভিজ্ঞ ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে নিবেন ।
- দীর্ঘ মেয়াদে এসব ওষুধ খেলে পাকস্থলীর পিএইচ পরিবর্তিত হয়ে যায়, এমনকি পাকস্থলীর ক্যানসারও হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায়
গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায় হলো:
- ব্যায়াম করা
- পানি পান করা
- আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া
- দারুচিনি ও লেবু খেতে পারেন আপনার গ্যাসট্রিক এর সমস্যা দূর করার জন্য ।
ব্যায়াম করা :
- ব্যায়াম করলে শরীর ভালো থাকে এটি আমরা সবাই জানি
তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এড়াতে খাওয়ার পর হাঁটার অভ্যাস করুন। এতে করে খাবার হজম হতে সাহায্য করবে । - এ ছাড়া দড়ি লাফ, দৌড় বা হাঁটা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতেও অনেক কার্যকরী বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত।
আপেল সিডার ভিনেগার :
- গ্যাসের সমস্যা দূর করা জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন।
- খাওয়ার আগে পানি বা চায়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে পারেন।
- এটি নিয়মিত দিনে তিনবার পান করলে অনেক ভালো ফলা ফল পাবেন ।
দারুচিনি
গ্যাসের সমস্যা কমাতে , পেটের ব্যথা কমাতেও অনেক ভালো কাজ করে দারুচিনি।
দারুচিনি খওয়ার নিয়ম হলো:
- প্রথমে দারুচিনি পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি কুসুম গরম অবস্থায় খেতে পারেন।
- আবার চায়ে বা দুধে দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে পান করতে পারেন।
লেবু:
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান করতে লেবুপানি বা লেবু চা পান করতে পারেন যার সাথে আপনি সামান্য পরিমাণ লবণ ও জিরা গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
- রবি সিমের এমবি দেখে কিভাবে? Robi MB Check
- নবুয়তের কততম বছরে চাচা আবু তালিব মারা যান? আবু তালেব জান্নাতি না জাহান্নামী?
- ওষুধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় – লক্ষণ ও প্রতিকার
- Best 22 Jobs for Teachers Leaving Education
- আঙ্গুলের নখ দেখে স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্ণয়
পড়তে পারেন চোঁখের স্বাস্থ্য বিষয়ক পোষ্টঃ What Do You Should do if a Mosquito Bite On Eyelid (ইংলিশ ভার্সন)
- তথ্যসূত্র সহায়িকা: Prothomalo, Jugantor, Jagonews24, Channel24bd
উপরিক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম , গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া বা গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। শুধু একটু নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি তাহলেই আপনি খুব সহজেই এর মোকাবেলা করতে পারবনে। উল্লেখিত খাবারগুলোর সঙ্গে আঁশ জাতীয় খাবার বেশি বেশি করে নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন তাহলে দেখবেন আপনাকে আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে হবে না। যার ফলসরূপ অপনাকে ওষুধ কিনতে হবে নাহ এবং আপনার উপার্জিত অর্থ সাশ্রয় হবে।